যশোর প্রতিনিধি: শীতপ্রধান দেশের নজরকাড়া ফুল টিউলিপ। যশোর ঝিকরগাছার পানিসারা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের কৃষি খামারে দোল খাচ্ছে বাহারি রঙের চোখ ধাঁধানো টিউলিপ। ইউরোপের টিউলিপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে সেখানে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। এর মাধ্যমে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালিতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।
ফুল দেখতে আসা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘দেশে এই প্রথম ফুলটি ফুটেছে। তাই আগ্রহ নিয়ে দেখতে এসেছি।’ সানজিদার মতো প্রতিদিনই নতুন এই ফুল দেখতে এসে শত শত মানুষ মুগ্ধ হচ্ছেন; জুড়িয়ে নিচ্ছেন চোখ।
বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রতিবছরই গদখালির ফুল চাষীরা নতুন জাতের ফুল উপহার দিয়ে থাকেন। গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, লং স্টিক রোজের পর এবারের ভালোবাসা দিবসে ফুলপ্রেমীদের জন্য নতুন উপহার টিউলিপ।
কৃষি খামারী মালিক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে এবার জানুয়ারিতে পাঁচ শতক জমিতে টিউলিপের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করি। শীত মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়ায় টিউলিপ ফোটাতে কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে। বীজ রোপনের ১৮ দিন পরেই টিউলিপের ফুল ফোটে।’
তিনি আরও বলেন, নেদারল্যান্ডসের এই ফুল বীজের প্রতিটির দাম পড়ে ৭০ টাকা। আর এক পিস টিউলিপ বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। সন্ধ্যা হলে বন্ধ আর সকাল হলেই মেলে যায় এই ফুল। পরীক্ষমূলক চাষে সফল হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে ফুল ফুটলেও বীজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই।
গদখালির ফুল চাষী মনজুর আলম বলেন, দেশে টিউলিপ ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উন্নজাতের এ ফুল চাষে সরকারি সহায়তা পেলে ব্যাপকহারে এর চাষ সম্ভব।
ফুল চাষী শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি একজন গোলাপ চাষী। ইসমাইলের জমিতে টিউলিপ ফুল ফোটার পর থেকে প্রতিদিনই দেখতে আসছেন তিনি। সন্ধ্যা হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া আবার সকাল হলে মেলে যাওয়া বিষয়টি তার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তিনিও এই ফুলের চাষ করতে চান।
গদখালীর ফুল সাম্রাজ্যে ঘুরতে এসে টিউলিপ ফুল দেখে মুগ্ধ জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, আগে গুগুল-ইউটিউবে এই ফুল দেখেছি। সরাসরি দেখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। চারটি ফুলও কিনেছেন তিনি।
বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরতে এসে দর্শনার্থী বিথি খাতুন বলেন, টিউলিপ ফুল দেখে বিমোহিত তিনি।
কৃষি বিভাগ বলছে, তার এই চাষের মধ্য দিয়ে গদখালীতে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী মৌসুমেই কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে এর চাষ।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, নতুন জাতের ফুল চাষের ইচ্ছা থেকেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় নেদারল্যান্ডস থেকে এই ফুলের জাত আনা হয়েছে। টিউলিপের প্রায় ১৫০টি জাত রয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে আট প্রজাতির চাষ হচ্ছে এখানে। ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো হবে।