নিজস্ব সংবাদদাতা:
খুলনার রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামে শিক্ষক কতৃক শিশু ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে খুজছে পুলিশ। মামলা দায়েরের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষক মোঃ মেহেদী হাসানকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনি শ্রীফলতলা গ্রামের মোহাম্মাদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার একজন শিক্ষক। নির্যাতনে আহত ওই শিক্ষার্থীর শরীর ফুলে উঠেছে বলে চিকিৎসক ও পরিবার সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
শারীরিক নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থী রূপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নের আনন্দনগর মেঝোঝিলার মোঃ রইউজ শেখের ছেলে সাব্বির শেখ (১১)। সে শ্রীফলতলা গ্রামের মোহাম্মাদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায় গত ৩ বছর যাবত হেফজ শাখায় লেখাপড়া করেন। নির্যাতনের ঘটনায় ২৪জানুয়ারি ওই শিক্ষার্থীর মা লিপি বেগম বাদি হয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। রূপসা থানা পুলিশ সেই অভিযোগ এজাহার হিসেবে রেকর্ড করেন (নং ১৮)। দন্ডবিধির ৩৪২, ৩২৩, ৫০৬ ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
সাব্বিরের চাচা শেখ অসিকুর রহমান জানান, পড়া না করে দুষ্টুমির অভিযোগ এনে নির্মমভাবে আমার ভাইপোকে বেত্রাঘাত করা হয়েছে। প্রায় দুইঘন্টা সে অজ্ঞান ছিলো। শরীরের পিঠে ও হাতের বাহুতে মোট ৪০টি বেত্রাঘাত রয়েছে। প্রতিটি আঘাতের স্থানে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। দ্রুত অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।
মামলার বাদি ওই শিক্ষার্থীর মা লিপি বেগম ২৫ জানুয়ারি দুপুরে জানান, সাব্বির রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুরো শরীর ফুলে উঠেছে। প্রচন্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কিডণী পরিক্ষার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন। সাব্বিরকে নিয়ে শহরের হাসপাতালে পরিক্ষার জন্য আজ ২৫ জানুয়ারি যাওয়ার কথা রয়েছে। তার সুষ্ঠ চিকিৎসার জন্য আমরা চিন্তিত। এভাবে শারীরিক নির্যাতনের সাথে জড়িত ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। তিন সন্তানের মধ্যে সব থেকে ছোট সাব্বিরের অসুস্থ্যতার বিষয়ে তার মা এসব কথা বলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে জানা গেছে, সাব্বির শেখ শ্রীফলতলা গ্রামের মোহাম্মাদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায় আবাসিকে থেকে লেখাপড়া করে। গত ২২জানুয়ারী বিকালে অন্য শিক্ষার্থীরা দুষ্টুমি করছিলো। এসময় পড়া না পাড়ায় শিক্ষক মোঃ মেহেদী হাসান বিরক্ত হয়ে সাব্বির শেখকে নিমর্ম ভাবে বেত্রাঘাত করেন। নির্যাতনের শিকার হয়ে সাব্বির প্রায় ২ঘন্টা অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে। এরপর জ্ঞান ফিরলে সে পালিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। তাকে গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ পুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার আলী জানান, মামলাটির তদন্তভার পেয়েছি। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।
রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ সরদার মোশাররফ হোসেন বলেন, মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটি গুরুতর জখম করার অভিযোগে তার মায়ের লিখিত অভিযোগটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ শফিক জানান, বেত্রাঘাতের কারনে আগাতের স্থান গুলোতে কালো রক্ত জমাট বেঁধেছে। সাব্বিরের হাত ও মুখ ফুলে গেছে। একারনে তার কিছু পরিক্ষা নিরিক্ষার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া তাকে সুস্থ্য করে তুলতে প্রয়োজনীয় চকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।