মোংলা সংবাদদাতা:মোংলায় কথিত আওয়ামীলীগ নেতা ও চাঁদপাই ইউনিয়নের দক্ষিন মালগাজী গ্রাম ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর মল্লিকের বিরুদ্ধে সংখ্যাঘু সম্প্রদযের এক গৃহবধুকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জিম্মি করে দীর্ঘদিন ওই গৃহবধুকে ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। প্রতারণা করে পীরের মাজারে নিয়ে শপথ ও নোটারী পাবলীকের মাধ্যমে মিথ্যা কাবিন নামার বিয়ে এবং ওই নারীর কাছ থেকে ইতোমধ্যে ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগে বলা হয়। তবে অভিযোগটি মামলা রেকর্ড না করে তদন্ত করে দেখছেন বলে জানিয়েছেন মোংলা থানা পুলিশ। মামলা রেকর্ডে পুলিশ প্রভাবিত হচ্ছে বলে ভুক্তভোগির পক্ষ থেকে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর মেম্বার জাহাঙ্গীরকে সালাম না দেয়ায় ওই এলাকার বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যকে তার বাহিনী নিয়ে মারপিট করে। ওই ঘটনা ব্যাপকভাবে পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ২০ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মোংলা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। তবে পরবর্তিতে পুলিশ এঘটনায় হামলার শিকার সংখ্যালঘু লোকজনের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরের পক্ষে একটি কাউন্টার মামলা রুজু করেন।
থানায় লিখিত অভিযোগ সুত্র ও ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, মোংলা উপজেলার চাদপাই ইউনিয়নের দক্ষিন মালগাজী গ্রাম ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গির মল্লিক বর্তমানে কথিত আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি এক সময় বিএনপি ক্ষমতামলে মালগাজী এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। তার পরিবারের সদস্যরা সকলেই জামায়াত ও বিএনপির রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। বর্তমান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কিছু দিন পর খোলস পরিবর্তন করে আওয়ামীলীগে যোগ দেয় জাহাঙ্গির মল্লিক। এর পর থেকেই শুরু হয় তার পুর্বেও সেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। দক্ষিন মালগাজী গ্রাম প্রায়ই হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদয়ের লোক বসবাস করার ফলে দীর্ঘদিন থেকেই জাহাঙ্গির মেম্বারের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে আসছে এলাকার নারী-পুরুষরা। ইউপি মেম্বার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর ওই গৃহবধূর স্বামীর কাছ থেকেতাকে কৌশল ও ভয়ভীতি দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। গত বছরের ১৭ জানুয়ারী বাগেরহাটে এক পীরের মাজারে শপথসহ নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে মুসলিম শরিয়া মতে স্থানীয় মসজিদের ইমামের দ্বারা লিখিত ও পবিত্র কালেমা পাঠ করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় বলে থানার অভিযোগে ওই নারী দাবী করেন। এ সময়ও তার কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে তার নামের চেক দিয়ে আরও তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় ইউপি মেম্বার জাহাঙ্গির মল্লিক।
স্থানীয়রা বলেন, মেম্বার জাহাঙ্গির মল্লিক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার নিজ হাতেই সংখ্যালগু সম্প্রদয়ের নারী-পুরুষ অনেকেই অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রতিবাদ করলে দলের ক্ষমতা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলা মামলার শিকার হতে হয়। এছাড়া বিএনপি থেকে আওয়ামী দলের যোগ দিয়ে নব্য নেতা হয়ে যদি কেউ দলের ভাবমুর্তি নষ্ট করে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন বলেন, এধরনের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে মালগাজী এলাকার অভিযুক্ত ইউপি মেম্বার জাহাঙ্গির মল্লিক জানায়, অভিযোগকারী আমার ৫নং ওয়ার্ডের একজন সাধারন বাসিন্দা। তার স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ আমার মধ্যস্থতায় হয়েছে, সে সুবাধে তার বাসায় আসা-যাওয়া হতো তবে আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগই মিথ্যা। গত ইউপি নির্বাচনে একই ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী ওই নারীকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
মোংলা শাখার হিন্দু,খ্রিষ্টান ও বৈদ্য ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবু উৎপল মন্ডল বলেন, বেশ কিছু দিন যাবত মালগাজী গ্রামের ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গির মল্লিকের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদয়ের নারী-পুরুষের উপর অত্যাচার নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া সম্প্রতি এক নারীর ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়েছে। চাঁদপাই ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা তারিকুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছিল কিন্ত তার কথাও কর্ণপাত করছে না মেম্বার জাহাঙ্গির। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিচারের দাবী জানায় ঐক্য পরিষদের এ নেতা।
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম জানান, মালগাজী এলাকার এক নারীর সাথে মিথ্যা বিয়ের প্রলোভনে অনৈতিক কার্যকলাপে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গির মল্লিকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। উপ-পুলিশ পরিদর্শক বিশ্বজিৎ মুখার্জীকে দায়ীত্ব দেয়া হয়েছে, যেহেতু টাকা পয়সার একটি লেনদেনের ব্যাপার রয়েছে তাই তদন্ত চলছে। অচিরেই অভিযুক্তর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।